মো. সাইদুর রাহমান খান।।
বিশ্বজুড়ে মহা সাড়ম্বরে পালিত হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসব জন্মাষ্টমী। পুরাণ অনুযায়ী, ৫,২০০ বছর আগে মথুরায় জন্ম নেন শ্রীকৃষ্ণ। দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালনের জন্যই ভগবান শ্রী বিষ্ণুর মানুষরূপে মর্ত্যলোকে আবির্ভাব হয়। তাদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবান শ্রী বিষ্ণুরই আর এক রূপ। যুগ যুগ ধরে কথিত রয়েছে এমনটাই। মহাসমারোহে সারা বিশ্বে পালিত হয় জন্মাষ্টমী উৎসব। জন্মাষ্টমীর শুভ তিথিতে একে অপরকে মিষ্টি মুখ করানোর সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে থাকেন শুভেচ্ছা বার্তাও। সারা বিশ্বে যেখানে শ্রীকৃষ্ণের ভক্তরা ছড়িয়ে আছেন, তাঁরা সবাই জন্মাষ্টমী উৎসব পালন করেন।
কে সেই শ্রীকৃষ্ণ?
শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন দেবকি ও বাসুদেব এর সন্তান
পুরাণ অনুসারে তিনি ধরাধামে অবতীর্ণ হন শ্রীবিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণ। মথুরায় কংসের কারাগারে তার জন্ম।
স্বয়ং বিষ্ণু কারাগৃহে উপস্থিত হয়ে দেবকী ও বাসুদেবকে দর্শন দেন এবং তাঁদের পূর্বজন্মের তপস্যা সম্পর্কে জানান। তার পুণ্যফলের জন্যই দেবকী ও বাসুদেবের কাছে তিন বার অবতার নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিষ্ণু দেবকীকে জানান যে, প্রথম জন্মে বৃষ্ণীগর্ভ নামক এক পুত্র হয়। দ্বিতীয় জন্মে দেবকী যখন দেবমাতা অদিতি ছিলেন, তখন বিষ্ণু ছিলেন, তার পুত্র উপেন্দ্র, এবং তিনিই বামন অবতারে রাজা বলিকে উদ্ধার করেন। এবার তৃতীয় জন্মে দেবকীর পুত্র কৃষ্ণ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে তাঁর প্রতিশ্রুতি পুরো করেন বিষ্ণু। সনাতন ধর্মাম্বলীরা তাঁর জন্মদিনকে জন্মাষ্টমী হিসেবে পালন করে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় চারিদিকে অরাজকতা, নিপীড়ন, অত্যাচার চরম পর্যায়ে ছিল। সেই সময় মানুষের স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। সর্বত্র ছিল অশুভ শক্তির বিস্তার। শ্রীকৃষ্ণের মামা কংস ছিলেন তাঁর জীবনের শত্রু। মথুরাতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সাথে সাথে সেই রাতে তাঁর বাবা বাসুদেব তাঁকে যমুনা নদী পার করে গোকুলে পালক মাতা পিতা যশোদা ও নন্দর কাছে রেখে আসেন।
জন্মাষ্টমী তিথি কেন বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পালন করে তা জেনে নেই
১. জন্মাষ্টমীর এই উৎসবকে বিশ্বের নানা প্রান্তে শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিনী এবং শ্রীকৃষ্ণ জয়ন্তী নামেও উদযাপন করা হয়।
২. ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিকেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিবস উপলক্ষে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়।
৩. জন্মাষ্টমীতে পুণ্যার্থীরা কেউ সারাদিন আবার কেউ কেউ সারারাতও উপবাস করেন। পুজো দেওয়ার পর উপবাস ভাঙেন তাঁরা।
৪. এদিন গোপালের পুজো করার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের জীবনের নানা ঘটনার কথা শোনানো হয়। পাশাপাশি গীতাপাঠও করা হয়ে থাকে।
৫. হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, এক বর্ষণমুখর রাতে কারাগারে জন্ম হয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের। তাঁর জন্মের পরই জেলের গরাদ নিজে থেকেই খুলে যায় এবং মামা কংসের হাত থেকে ছোট্ট কৃষ্ণকে রক্ষা করতে বাবা বাসুদেব তাকে নন্দরাজার মন্দিরে রেখে আসেন।
৬. জন্মাষ্টমীর শুভ তিথিতে ভক্তরা দিনটা বিভিন্নভাবে পালন করেন। বিশেষত বৃন্দাবন ও মথুরাতে এই দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়।
৭. মহারাষ্ট্রে জন্মাষ্টমীতে ‘দহি হান্ডি’ উদযাপিত হয় মহা ধুমধাম করে। যেখানে বহু মানুষ একত্রিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের মাখন চুরির আদলে দই বা মাখনের হাঁড়ি ভাঙেন।
Leave a Reply